বাংলার ব্যঞ্জনধ্বনি
Keywords:
মুহম্মদ আবদুল হাইAbstract
যে-কোন ভাষার বাগধ্বনিই অর্থবোধক ধ্বনি। ধ্বনি অর্থহীনও হতে পারে, কিন্তু তা কোন ভাষার অন্তভুক্ত নয়। যে-কোনো ভাষার ব্যগধ্বনিগুলোর মধ্যে স্বরধ্বনির বিপরীত ধ্বনিই ব্যঞ্জনধ্বনি। স্বাভাবিক কথাবার্তায় গলনালী ও মুখবিবর দিয়ে বাতাস বেরিয়ে যাবার সময় কোনো জায়গায় বাধা না পেয়ে কিংবা শ্রুতিগ্রাহ্য চাপা না খেয়ে যে ঘোষধ্বনি উদ্গত হয় তা-ই স্বরধ্বনি। এ থেকে বোঝা যায় যে-সব পানি এ সংজ্ঞাভুক্ত নয় স্বাভাবিক কথাবার্তায় সেগুলোই বাঞ্জনধ্বনি। অর্থাৎ স্বাভাবিক পদ্ধতিতে কথাবার্তা বলার সময়ে ফুসফুস-নির্গত বাতাস গলনালী, মুখবিবর কিংব। মুখের বাইরে (ঠোঁটে) বাধা পাওয়ায় কিংবা শ্রুতিগ্রাহ্য চাপা খাওয়ার ফলে যে-সব ধ্বনি উদ্গত হয় সেগুলোই ব্যঞ্জনধ্বনি।
এ সংজ্ঞার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে (১) যাবতীয় অঘোষ ধ্বনি (যেমন ক, চ, স), (২) বায়ুপথ রুদ্ধ হওয়ার জন্যে যত ধ্বনি উত্থিত হয় (যেমন গ, ট, ব, ল), (৩) যে-সব ধ্বনি উচ্চারণে বাতাস মুখবিবর দিয়ে না বিরিয়ে নাসাপথে বেরোয় (যেমন, ম, ন, ঙ) এবং (৪) শ্রুতিগ্রাহ্য ঘষা লেগে যে-সব ধ্বনি উৎপন্ন হয় (যেমন শ, স.) এদের সবগুলিই ব্যঞ্জনানি।
ধ্বনি উৎপাদনের দিক থেকে স্বর ও ব্যঞ্জনধ্বনির পার্থক্য নিতান্ত ‘arbitrary’ বা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত নয়, এ পার্থক্য ‘acoustics’ বা শ্রুতির দিক থেকেই সহজবোধ্য। ধ্বনি বিচারে এবং ধ্বনির মর্মগ্রহণে মানুষের কানের মতো উপযোগী আর কোনো যন্ত্র নেই। ধ্বনির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাগ কিংবা বৈশিষ্ট্য উপলব্ধির জন্যে কান যদি তৈরী থাকে তা হ’লে এক ধ্বনি থেকে অন্য ধ্বনির দ্যোতনাগত পার্থক্য মানুষের কাছে সহজবোধ্য হ’য়ে ওঠে। তখনই বোঝা যায় স্বর ও বাঞ্জনধ্বনির সংজ্ঞাগত পার্থক্য তাদের অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনাকে কেন্দ্র করেই রচিত হয়েছে।