শামসুর রাহমানের কবিতা : চতুরাঙ্গিক জীবন-ভাবনা
Abstract
শামসুর রাহমান সে সমস্ত কবির একজন যিনি কবিতার সঙ্গে 'লকা লকি করে দেখে ফেলেছেন জীবনের অপার রহস্য। অনুধ্যানে, রোমন্থনে এবং সংবেদনায় তাঁর একাত্মতা বিস্ময়কর। তিনি কবিতা লেখেন জীবনের পৃষ্ঠার পরে দাঁড়িয়ে। হয়তো সেটি 'খুকির' ফুল্কি-তোলা রুমালের মত অথবা 'টিনের বাক্সে' রক্ষিত লাল ফিতে ও ক্ষুদ্র পুঁটুলির মধ্যে নিভৃত শৈশব। তাঁর শিশিরগুলো মোলায়েম আবেগে শীত-মাখা । তাঁকে নির্বিকার স্মৃতিবাহী বর্ণনাময় আত্মগত মানুষ মনে হয় কখনো। কখনো বা তিনি করতালি মুখরিত সার্কাসের নিচে নিরানন্দ জীবনের রহস্য উন্মোচনকারী। বাস্তবিক, রাহমানের জীবন তিরিশোত্তর বাংলা কবিতার বৈচিত্র্যের স্মারক, প্রান্তময় পথের চিহ্নায়ক। এ রচনায় তাঁর কবিতায় বিধৃত জীবন-চেতনার স্বরূপ আলোচনা করা হল।
শামসুর রাহমানের কবিতায় বিধৃত জীবন চারটি স্তরে নির্ণিত হতে পারে। প্রথমত কবির শৈশব ও নাগরিক জীবনের রূপায়ণে মধ্যবিত্তের প্রাত্যহিক জীবন : দ্বিতীয় পর্যায়ের জীবন উঠে এসেছে, নাগরিক অভিযোজিত মানুষের দূরতম নস্টালজিক চেতনায় দিনাতিপাত ও ভাসমান মানুষের বৈপরীত্যায়ন, তৃতীয় পর্যায়ের জীবনচিত্র পাওয়া যায় কবির অধীত বিদ্যার আন্তর্সংশ্লেষণে পুরাণ-প্রতীতীজাত জীবন এবং শেষ পর্যায়ে সংগ্রামকর্ষিত মানুষের প্রতিবাদ, অর্থাৎ জাতীয় জীবনের ঘটনাবলির প্রতীকায়িত জীবন। আসলে শামসুর রাহমান চল্লিশের দশকের পুরনো ঢাকার জীবনকে টেনে নিয়ে এসেছেন আধুনিক আজকের রাজধানী ঢাকার ঘূর্ণিত জীবনে। সেখানে রাহমানের বেতো ঘোড়া নেই বটে, নেই সহিসের হিস হিস শব্দ কিংবা আস্তাবলে খড়ের গম্বুজে ঘুমানো অবেলার জোব্বাঅলা একজন। তাঁর ধ্যানী চোখ একটি অর্দ্ধ শতাব্দীর কাব্যচর্চার অভিজ্ঞতায় স্থির মীমাংসায় পৌঁছায়।