মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা : কতদিন, কতদূর
Abstract
এ নিবন্ধের দুটি ভাগ : প্রথমটি একটি-দুটি পরিভাষাকে সুনির্দিষ্ট করার লক্ষ্য নিয়ে, এর ১ থেকে ৪ অংশ পর্যন্ত বিস্তারিত। পরিভাষা দুটি হল ‘ভাষা' এবং ‘মাতৃভাষা’। আর দ্বিতীয় অংশটি ‘মাতৃভাষা’র মাধ্যমে শিক্ষাকে কতদূর বিস্তারিত করা যায় সে বিষয়ে জল্পনা। আপাতত অলস জল্পনা বলে মনে হতে পারে, কিন্তু উপনিবেশের শিক্ষাপ্রণালী ও তার অভ্যাস থেকে একটি পৃথক পথ সন্ধানের প্রয়াস হিসেবে একে দেখা যেতে পারে । প্রথম বিষয়টি প্রায় দুশো বছর ধরে বহুচর্চিত, কাজেই এ প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, এ নিয়ে নতুন আর কী বলা সম্ভব। দ্বিতীয়ত, এই পরিভাষা-পরিমার্জনা কি এতই গুরুত্বপূর্ণ? আমরা মনে করি গুরুত্বপূর্ণ। আবার তত্ত্বের দিক থেকে এও আমরা জানি যে, এ প্রশ্ন তখনই ওঠে, যখন আমরা ধরে নিই যে ব্যবস্থা এখন চলছে তা সব ঠিকঠাকই আছে, অনেক দিনের ভাবনাচিন্তার ফলে একটা ব্যবস্থায় পৌঁছানো গেছে, তাতে আর নাড়াচাড়া দেওয়ার দরকার নেই। আমাদের উপনিবেশযাপনের সময় আমাদের শিরোনামের প্রশ্নটা জরুরি ছিল, কারণ ঔপনিবেশিকদের ভাষা আমাদের ভাষাকে সরিয়ে ‘রাজভাষা' হয়ে বসেছিল, আর রাজভাষা হলেই তাকে অনিবার্যতই শিক্ষাতে একটা আধিপত্যপূর্ণ স্থান দিতে হবে, নইলে রাজকর্ম পাওয়া দুষ্কর হবে। তাই ১৮৩৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি টমাস ব্যাবিংটন মেকলের ইংরেজি-শাসিত শিক্ষানীতি প্রচারিত হল, এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের শিক্ষার ইতিহাস যাঁরা চর্চা করেন তাঁরা জানেন, নানা পরিবর্তনের পর তার সার কাঠামো এই দাঁড়াল যে, ‘মাতৃভাষা’কে বাহন করে তার সরকারি আয়োজনে তার স্কুল ও কলেজ স্তরের কিছু বিষয় পড়ানো হয়, হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক বিদ্যার বিষয়গুলিতেও ‘মাতৃভাষা’য় পরীক্ষা দেওয়া যায়। পরীক্ষা দেওয়া যায় আর ক্লাসে ‘মাতৃভাষা' ব্যবহার করে পড়ানো হয় – এই দুই ঘটনা এক সঙ্গে চলে এমন নাও হতে পারে। কিন্তু, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ডাক্তারি, ব্যবসায়-পরিচালনা, আইন ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের উচ্চতর স্তরের পড়াশোনা মূলত ইংরেজির মাধ্যমেই করতে হয়। প্রাথমিক স্তরে শি-মাতৃভাষার (পরে দেখুন) কিছু ভূমিকা ছিল বটে, বিশেষত ১৮৫৪ সালে উইলিয়াম অ্যাডামের সুপারিশে তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেশের শিক্ষানীতিতে তার প্রভাব ছিল নগণ্য। কচরু জানাচ্ছেন, “ By 1882, over 60 per cent of primary schools were imparting education through English. পরে অবশ্য এই অবস্থাটা একটু বদলেছে।