চিলেকোঠার সেপাই : রাজনৈতিক উপন্যাসচিন্তার বিকল্প নন্দন
Abstract
চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাসটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে সংঘটিত উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান অবলম্বনে রচিত। উপন্যাসের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক। কিন্তু রাজনৈতিক ঘটনা অবলম্বনে রচিত হলেও একটি উপন্যাস রাজনৈতিক উপন্যাসের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয় না। অন্যদিকে বিষয় হিসেবে রাজনৈতিক ঘটনার সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও একটি উপন্যাস হয়ে উঠতে পারে রাজনৈতিক উপন্যাসরূপে সার্থকতামণ্ডিত। বিবেচনার এই পরিমাপটি যথাযথভাবে চিহ্নিত ও ব্যাখ্যা করেছেন পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর উপন্যাস রাজনৈতিক (১৯৯১) গ্রন্থে। তাঁর মতে, রাজনৈতিক উপন্যাসের ‘রূপ-গঠন নির্ভর করে বিশেষ দেশ-সময়, সমাজদৃশ্য-মানবদৃশ্যের ওপর। ইতিহাসের পরম্পরা ও উত্তরণ-অধঃপতন সম্পর্কে একটি শ্রেণীর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া একজন ঔপন্যাসিকের চৈতন্যগত চিন্তায় সংহতি পায়, সেটি যখন ভাষার চিত্রকল্পে রূপ নেয়, তখন রাজনৈতিক উপন্যাসের সৃষ্টি।' একথা সত্য, রাজনীতির মূল সর্বদা প্রোথিত থাকে সমাজ-অর্থনীতি-সংস্কৃতির গভীর প্রদেশে। আমাদের এই এককালের উপনিবেশ-পরিমণ্ডলে শুধু আর্থ-সামাজিক নয়, সমগ্র মনোজগতের ওপর ঔপনিবেশিক শক্তির কর্তৃত্ব সম্বন্ধে ঔপন্যাসিকের চেতনা সর্বতোভাবে জাগ্রত না-থাকলে প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক উপন্যাস সৃষ্টিই দুরূহ হয়ে ওঠে। ওই আগ্রাসী আধিপত্যের সর্বনিয়ন্ত্রণকারী শক্তির বিরুদ্ধে জনমানসের বিপুল বিক্ষুব্ধ তরঙ্গ যখন আমূল পরিবর্তনে সচেতনভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও সক্রিয় হয় তখনই একটি সার্থক রাজনৈতিক উপন্যাস সৃষ্টি তার শর্ত পূরণ করে। চিলেকোঠার সেপাই এই মানদণ্ডে রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে সার্থক।