ভাস্কর্য ও স্থাপনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শিল্পায়ন
Abstract
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে স্বাধিকার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে অখণ্ড ভারতে অনেক বিপ্লবী শহিদ হয়েছেন। বিশ শতকের ২০-এর দশকে এ সংগ্রাম হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। পরাজিত হয় ঔপনিবেশিক ইংরেজ। ১৯৪৭-এর দেশভাগে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে পাকিস্তান ও ভারত। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে এই বিভাজনে হুমকির মুখে পড়ে পাকিস্তানের পূর্ব অংশের মানুষের জীবনাদর্শ। এ আদর্শ বাঙালি এবং আরও অনেক নৃগোষ্ঠীর অসাম্প্রদায়িক জীবনচর্চায় এক পরিসুত রূপ লাভ করেছে হাজার বছরের পথ-পরিক্রমায়। তাই ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে এদেশের সংঘর্ষ ছিল অনিবার্য। ফলে অনেক সংগ্রামের পর অনিবার্য হয়ে ওঠে ১৯৭১- এর মুক্তিযুদ্ধ। বিশ্বের মানচিত্রে বিধৃত হয় নতুন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। এ রাষ্ট্রের ভিত্তিমূলে স্বভাবতই ধর্ম নয়, অসাম্প্রদায়িকতা অন্যতম প্রধান গুরুত্ব পায়। শিল্পসৃষ্টির কার্যকারণ সূত্র অন্বেষণের জন্য ইতিহাসের এই সংক্ষিপ্ত-পাঠ সংগত বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। কারণ স্বাদেশিক চেতনা ও স্বাধিকার চেতনা থেকে এই উপমহাদেশে শিল্পচর্চার পালাবদল ঘটেছে এবং জন্ম নিয়েছে নতুন সৃষ্টি। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে যারা আত্মদান করেছিলেন তাদের অবদান কীর্তিত করার জন্যই মূর্তিভাস্কর্যে সমৃদ্ধ ভারতীয় সভ্যতা সেক্যুলার বা অসাম্প্রদায়িক চেতনাজাত ভাস্কর্য নির্মাণ করে এ শিল্পে নতুন মাত্রা সংযোজন করে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ভরকেন্দ্র ছিল কলিকাতা শহর এবং এ আন্দোলনে যে নেতৃবৃন্দ ও বিপ্লবীরা জীবন-পণ সংগ্রাম করেছেন – মৃত্যুবরণ করেছেন – তাদের ত্যাগের মহিমা কীর্তিত করার জন্য কলিকাতা শহরে নির্মিত হয় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্মৃতি-ভাস্কর্য (monumental sculpture )। ধর্মকেন্দ্রিক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দুষ্টনীতির বিরুদ্ধে এ দেশের অসাম্প্রদায়িক জীবন-ভাবনার মানুষের লড়াই ছিল অনিবার্য। যে লড়াই বিশেষ গতি পায় ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনে। এ আন্দোলনে যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নির্মিত হয় শহিদ মিনার।